শ্রবণ সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বয়স, রোগ বা শব্দদূষণ—যেকোনো কারণে হোক, শ্রবণ শক্তি হ্রাস পেলে জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তবে আশার কথা হলো, বর্তমান সময়ের হিয়ারিং এইড বা শ্রবণযন্ত্র প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি আমাদের আবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনতে পারছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব আধুনিক হিয়ারিং এইড-এর বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে, যেগুলো শ্রবণ সমস্যায় ভোগা মানুষের জীবনে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

১. ব্লুটুথ, রিচার্জেবল ফিচার ও স্মার্টফোন কানেক্টিভিটি

আধুনিক হিয়ারিং এইডগুলো এখন আর শুধু শব্দ শোনার ডিভাইস নয়, এগুলো প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে উঠেছে। ব্লুটুথ কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা টিভির সঙ্গে হিয়ারিং এইড যুক্ত করতে পারেন। ফলে সরাসরি ফোন কল, মিউজিক বা ভিডিও শুনতে সুবিধা হয়।

এছাড়াও, এখনকার অনেক হিয়ারিং এইিডই রিচার্জেবল। ফলে বারবার ব্যাটারি বদলানোর ঝামেলা নেই। USB চার্জিং বা পোর্টেবল চার্জিং কেসের মাধ্যমে এগুলো সহজেই চার্জ দেওয়া যায়, যা পরিবেশবান্ধব এবং ব্যবহারকারীর জন্য অনেক সুবিধাজনক।

২. স্পিচ ক্ল্যারিটি (কথা শোনার স্পষ্টতা)

শ্রবণ সমস্যায় ভোগা মানুষদের প্রধান অভিযোগ হলো—কথা ঠিকভাবে বোঝা যায় না। বিশেষ করে কোনো ভিড় বা ব্যস্ত পরিবেশে। এ সমস্যার সমাধানে উন্নত হিয়ারিং এইডগুলো ব্যবহার করছে স্পিচ এনহ্যান্সমেন্ট টেকনোলজি। এটি আশপাশের অপ্রয়োজনীয় শব্দ কমিয়ে শুধুমাত্র মানুষের কণ্ঠস্বরকে স্পষ্টভাবে সামনে তুলে ধরে।

৩. ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ রিডাকশন

আধুনিক শ্রবণযন্ত্রগুলোতে রয়েছে উন্নত নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে আশপাশের অপ্রাসঙ্গিক শব্দ যেমন—ট্রাফিক, পাখির ডাক, বাতাসের শব্দ ইত্যাদি কমিয়ে আনা যায়। ফলে ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট শব্দে (বিশেষ করে মানুষের কথা) আরও মনোযোগ দিতে পারেন।

৪. ডিরেকশনাল ও ওপেন ৩৬০° সাউন্ড উইথ মুভমেন্ট

নতুন প্রজন্মের হিয়ারিং এইডগুলো শুধু সামনে বা পাশের শব্দই ধরতে পারে না, বরং চারদিক থেকে আসা শব্দও বুঝে নিতে পারে। এতে যুক্ত হয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি সাউন্ড প্রসেসিং প্রযুক্তি। ব্যবহারকারীর মাথার বা শরীরের গতি বুঝে এই যন্ত্র নিজেই শব্দের দিক নির্ণয় করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী শব্দ প্রসেসিং করে।

৫. অটোমেটিক এনভায়রনমেন্ট ডিটেকশন ও অ্যাডজাস্টমেন্ট

হিয়ারিং এইড ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধরণের পরিবেশে যান—শান্ত ঘর, ব্যস্ত রাস্তা, অফিস কিংবা পার্টি। প্রতিটি পরিবেশে শব্দের ধরন ও মাত্রা আলাদা। আধুনিক হিয়ারিং এইডগুলোতে রয়েছে অটোমেটিক এনভায়রনমেন্ট ডিটেকশন প্রযুক্তি, যা যন্ত্রটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চারপাশের পরিবেশ বুঝে নেওয়ার এবং সেই অনুযায়ী সাউন্ড সেটিংস পরিবর্তন করার ক্ষমতা দেয়।

৬. নিজের কণ্ঠস্বরের প্রসেসিং (Own Voice Processing)

অনেক সময় হিয়ারিং এইড ব্যবহারকারীরা নিজেদের কণ্ঠ শুনে অস্বস্তি বোধ করেন, কারণ এটি প্রাকৃতিক শোনায় না। এই সমস্যার সমাধানেই এসেছে “Own Voice Processing” প্রযুক্তি। এটি ব্যবহারকারীর কণ্ঠস্বরকে আলাদা করে চিনে নেয় এবং এমনভাবে প্রসেস করে যাতে সেটি আরও প্রাকৃতিক ও আরামদায়ক শোনায়।

৭. বাইনৌরাল প্রসেসিং (Binaural Processing)

যারা দুটি কানে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন, তাদের জন্য বাইনৌরাল প্রসেসিং একটি বিপ্লব। এটি দুই কানের যন্ত্রকে একসাথে কাজ করার সুযোগ দেয়, ফলে শব্দের উৎস নির্ধারণ, দূরত্ব বোঝা এবং কথা বোঝা আরও স্বচ্ছ ও প্রাণবন্ত হয়।

৮. যেকোনো জীবনধারার উপযোগী হিয়ারিং এইড টেকনোলজি

বর্তমান বাজারে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের হিয়ারিং এইড—যেগুলো বিভিন্ন জীবনধারা অনুযায়ী ডিজাইন করা। কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, গৃহিণী, বয়স্ক নাগরিক—সবার জন্য রয়েছে আলাদা প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্র। কেউ চাইলে খুব ছোট ও চোখে না পড়া যন্ত্র বেছে নিতে পারেন, আবার কেউ চাইলে কান পেছনে লাগানো শক্তিশালী ডিভাইসও ব্যবহার করতে পারেন।

৯. টেস্ট ড্রাইভ করুন আধুনিক প্রযুক্তির এই হিয়ারিং এইড

হিয়ারিং এইড কেনার আগে সঠিক প্রযুক্তি এবং ফিচার বেছে নেওয়াটা খুব জরুরি। এজন্য আপনি চাইলে Hearing Store-এ এসে ফ্রি হিয়ারিং টেস্ট করতে পারেন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির হিয়ারিং এইড হাতে নিয়ে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আপনি বুঝে নিতে পারবেন কোন মডেল বা প্রযুক্তি আপনার জন্য উপযুক্ত।