
১. পরিচিতি
শ্রবণ শক্তি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্দ্রিয়। এটি আমাদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করে এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ সহজ করে তোলে। কিন্তু কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে আমাদের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে, যাকে আমরা শ্রবণ হ্রাস বা Hearing Loss বলি। এটি শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি জীবনের কোনো না কোনো সময়ে শ্রবণ হ্রাসে আক্রান্ত হন। এই লেখায় আমরা শ্রবণ হ্রাসের লক্ষণ, প্রতিরোধ, বয়সজনিত শ্রবণ হ্রাস, চিকিৎসা ও এই সমস্যার সঙ্গে জীবন কিভাবে কাটানো যায় তা বিশ্লেষণ করবো।
২. শ্রবণ হ্রাসের লক্ষণ ও উপসর্গ (Hearing Loss Signs & Symptoms)
- কথা স্পষ্ট শুনতে অসুবিধা হওয়া, বিশেষ করে ব্যস্ত বা গোলমেলে পরিবেশে।
- অন্যদের বারবার কথা পুনরাবৃত্তি করতে বলা।
- টেলিভিশন বা রেডিওর শব্দ খুব বেশি বাড়িয়ে শোনা।
- ফোনে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়া।
- মনে হওয়া, অন্যরা "স্পষ্ট করে কথা বলছে না"।
- শিশুদের ক্ষেত্রে—বয়স অনুযায়ী কথা না বলা, স্কুলে মনোযোগের ঘাটতি ইত্যাদি।
৩. প্রতিরোধ ও সুরক্ষা (Prevention & Protection)
- তীব্র শব্দ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন: নিয়মিত উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন।
- মোবাইল ও হেডফোনের আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন: কিছু ওষুধ শ্রবণ হ্রাস ঘটাতে পারে।
- কানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: সংক্রমণ রোধে এটি জরুরি।
- নিয়মিত কানের পরীক্ষা করান: ঝুঁকিপূর্ণ পেশার ব্যক্তিদের বছরে একবার পরীক্ষা করা উচিত।
৪. বয়সজনিত শ্রবণ হ্রাস (Age Related Hearing Loss)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণ সংবেদনশীলতা হ্রাস পেতে থাকে। একে বলা হয় Presbycusis, যা সাধারণত ৬০ বছরের পর দেখা দেয়। সাধারণত এই শ্রবণ হ্রাস ধীরে ধীরে হয় এবং দুই কানে একসঙ্গে ঘটে।
বৈশিষ্ট্য:
- উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ শুনতে সমস্যা হয়।
- দ্রুত কথা বুঝতে কষ্ট হয়।
- মনোযোগ দিতে বেশি কষ্ট হয়।
- একাকীত্ব ও মানসিক বিষণ্নতা দেখা দেয়।
৫. চিকিৎসার উপায় (Treatment Options)
- হিয়ারিং এইড (Hearing Aids): শ্রবণশক্তি বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট (Cochlear Implant): গুরুতর সমস্যায় কার্যকর সার্জারি পদ্ধতি।
- ঔষধ ও সার্জারি: সংক্রমণ বা টিউমার জনিত সমস্যায় প্রয়োজনে করা হয়।
- অডিও থেরাপি: কথা বোঝার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. শ্রবণ হ্রাস নিয়ে জীবনযাপন (Living with Hearing Loss)
- পরিবারের সহযোগিতা: কথা বলার সময় চোখের যোগাযোগ বজায় রাখা ও ধীরে কথা বলা সহায়ক।
- সহায়ক প্রযুক্তি: সাবটাইটেল, অ্যাম্পলিফায়ার ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মানসিক স্বাস্থ্য: একাকীত্ব দূর করতে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা দরকার।
- সাপোর্ট গ্রুপ: শ্রবণ সহায়ক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার
শ্রবণ হ্রাস একটি বাস্তবতা—তবে এটি অপ্রতিরোধ্য নয়। সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শ্রবণ হ্রাসজনিত সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। শ্রবণ শক্তি হারালে তা মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে প্রভাব ফেলে—তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর উপসর্গ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন — শ্রবণ ক্ষমতা বজায় রাখুন।